খাগড়াছড়ির পানছড়ি থেকে বিভিন্ন প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে পাচারের শিকার হওয়া পাঁচজনকে ঢাকা তুরাগ থানার উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের প্রিয়াংকা সিটির সাবদার হোসেন রোডের একটি ভাড়া বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় পাচার চক্রের সিয়াও সুসুই চীনা নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর তাকে নিয়ে উদ্ধার অভিযানে নামে পুলিশ। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে পাচারের শিকার পাঁচজনকে উদ্ধার হয়। পরবর্তীতে পাচার চক্রের মূলহোতা সুমি চাকমা প্রকাশ হেলিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
রবিবার (৯ জুন) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপারের কনফারেন্স হলে প্রেসব্রিফিং কালে পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, গত ১ জুন সকালে ভিকটিম ও তার বান্ধবী (অন্য ভিকটিমসহ) পানছড়ি থেকে প্রথমে সিএনজিচালিত অটোরিকশা করে খাগড়াছড়ি সদরে আসে। পরবর্তীতে খাগড়াছড়ি সদর থেকে বাসে করে ঢাকায় যায় ভিকটিমরা। ঢাকায় পৌঁছার পরে মোবাইলে যোগাযোগ করে মানবপাচারকারী মূলহোতা সুমি চাকমা প্রকাশ হেলির সঙ্গে। তিনি তাদেরকে ঢাকার উত্তরায় এক বাসায় নিয়ে তাদের মোবাইল কেড়ে নেয় এবং সবার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে তাদেরকে ঘরে আটক করে রাখে।
তিনি আরও জানান, অভিযুক্তরা পরস্পর পাশের জেলার এবং উদ্ধারকৃত অপর ভিকটিমদেরও একই প্রলোভন দেখিয়ে চীনে পাচার করার জন্য বিভিন্ন স্থান থেকে এনে তাদের ওই বাসায় আটক করে রাখে। অভিযুক্তরা সংঘবদ্ধভাবে প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকা থেকে ভিকটিমদেরকে চীনে নেওয়ার প্রলোভন দিয়ে তাদের পরিবারের অগোচরে ঢাকায় এনে তাদেরকে বিদেশে পাচারের উদ্দেশ্যে ঢাকায় নিজ ভাড়া বাসায় আটক করে রাখে।
আমরা তদন্ত কৌশল অবলম্বন করে দেশব্যাপী সম্ভাব্য সব জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে পানছড়ি থানা পুলিশের চৌকশ দলটি গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকার তুরাগ থানার উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর প্রিয়াংকা সিটি, সাবদার হোসেন রোডের হরিজেন্টাল-১ ডুপ্লেক্স-২ ভাড়া বাসায় অভিযান চালিয়ে সিয়াও সুসুই নামে একজন চীনা নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার চীনা নাগরিকের দেওয়া তথ্য মতে, পরবর্তীতে মানবপাচার চক্রের মূলহোতা সুমি চাকমা প্রকাশ হেলিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। চক্রের জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
পুলিশ সুত্রে জানা যায়, প্রথম ভিকটিমের মা গত ২ জুন ও ৪ জুন দ্বিতীয় ভিকটিমের মা খাগড়াছড়ির পানছড়ি থানায় নিখোঁজ জিডি করেন। পরে খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মুক্তা ধরের সার্বিক দিক নির্দেশনায় তাদের নিখোঁজ সংক্রান্ত অবগত হয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মো. জসীম উদ্দিনের নেতৃত্বে পানছড়ি থানার অফিসারদের সমন্বয়ে একটি আভিযানিক ও চৌকশ টিম গঠন করেন। বিভিন্ন তদন্ত কৌশল অবলম্বন করে দেশব্যাপী সম্ভাব্য সব জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে পানছড়ি থানা পুলিশের চৌকশ দলটি। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকার তুরাগ থানা এলাকায় সুমি চাকমা প্রকাশ হেলি ও সিয়াও সুসুইয়ের ভাড়া বাসায় অভিযান চালানো হয়। পরে ওই বাড়ি থেকে ভিকটিম ও তার বান্ধবীসহ (অপর ভিকটিম) আরও তিনজনকে উদ্ধার করা হয়।
অভিযুক্তরা সংঘবদ্ধভাবে প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকা থেকে ভিকটিমদেরকে চীনে নেওয়ার প্রলোভন দিয়ে তাদের পরিবারের অগোচরে ঢাকায় এনে তাদেরকে বিদেশে পাচারের উদ্দেশ্যে ঢাকায় নিজ ভাড়া বাসায় আটক করে রাখে। এই ঘটনার বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পানছড়ি থানায় মামলা রুজু করা হয়েছে। সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রটিকে গ্রেপ্তারের জন্য ধৃত আসামিকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হবে। এই চক্রে জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চৌকশ আভিযানিক টিম কাজ করছে।